মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৮:৩৯ অপরাহ্ন
বাংলার মুখ ডেক্স :
বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার মানুষের রাতের ঘুম যেন উড়ে গেছে নদী ভাংগন আতংকে। রাতে অনেকে আতকে উঠে পানির গর্জনে। নদীর পাড়ের মানুষগুলো ভাবে এই বুঝি রাক্ষসী নদীর গর্ভে চলে গেল তাদের ঘরবাড়ী। শুধু এ বছর নয়, প্রতি বছর বর্ষা এলেই বরিশাল বিভাগের নদী বেষ্টিত মানুষগুলো আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ ধরতে থাকে, বর্ষাকাল যেন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। বরিশাল বিভাগের বেশ কয়েকটি উপজেলা ইতিমধ্যে নদী ভেঙ্গে বিলিন হওয়ার পথে। এর মধ্যে মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ, চরফ্যাশন, রাজাপুর বাউফল, মীজাগঞ্জ অন্যতম। নদীর পাশে অবস্থিত অন্যান্য উপজেলা গুলোও রয়েছে মারাত্মক ঝুকিতে। ইতিমধ্যে নদীর করাল গ্রাস কেড়ে নিয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। গ্রামের পর গ্রাম বিলিন হয়ে গেছে গেছে নদী গর্বে। বর্ষা এলে বরিশাল বিভাগের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর যেন শক্তি বেড়ে যায় শতগুন। তখন নদী শাসনের কোন উপায় থাকে না। শুকনো মৌসুমে নদী শাসনের উপযুক্ত সময় হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড অথবা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অজানা কারণে এ সময় এ বিষয়ে জরুরী কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বর্ষা এলে সব কিছু যখন বিলিন হয়ে যায়, তখন ভুক্তভোগী মানুষ, কিছু সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নদী ভাংগন প্রতিরোধে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য সভা সমাবেশ মানববন্ধন করে থাকে। তখনই সরকারের একটু টনক নড়ে; আর শুরু হয় লোক দেখানো নদী শাসনের প্রতিক্রিয়া। কিন্তু প্রতি বছর যে পরিমান নদী ভাংগে তার তুলনায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুবই নগন্য। ফলে সমস্যা সমস্যাই থেকে যায়। নদী ভাংগন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রকল্পগ্রহণ করতে জন প্রতিনিধিদের তেমন আগ্রহ লক্ষ রাখা যয় না। তারা নদী ভাংগন পরিদর্শন আর ফটোসেশন করেই যেন দায়মুক্তি পায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, যেমন ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর মেম্বার, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যদি তাদের নিজ নিজ এলাকার নদী ভাংগন প্রতিরোধে সোচ্চার হয়, তাহলে নদী-পারের মানুষের নিরব কান্না অনেকটাই কমে যায়। জাতীয় সংসদের নির্বাচন এলে যে ইস্তেহার ঘোষণা করা হয় সেই ইস্তেহার অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নদী ভাংগন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিলে নদী ভাংগনের পরিমান অনেকটাই কমে যেত।
সর্বগ্রাসী নদী ভাংগনের ফলে বরিশাল বিভাগের অনেক বিত্তবানরাই আজ নিঃস্ব। নদীতে তাদের ঘরবাড়ী সহায় সম্বল জমিজমা সব কেড়ে নিয়েছে। যাদের এক সময় গোলাভরা ধান আর গোয়ালভরা গরু ছিল তারা আজ পথে বসা। অনেকেই যেতে হয় সরকারী ভ্রানসহায়তার জন্য যা কোনদিনই তারা কল্পনা করে না। অনেকেই নিজেদের বাপ দাদার ভিটে মাটি ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে একটু মাথা গোঁজার ঠাই নিয়েছেন। জীবন জীবিকার তাগিদে কেউ কেউ হয়েছেন শহরমুখী। গ্রামের এক সময়কার নামকরা ধনী ব্যক্তি এখন হয়েছেন হকার অথবা দিন মজুর। এ সব দৃশ্য দেখলেও মন খারাপ হয়ে যায়।
নদীর এই নিষ্ঠুরতায় অনেকের সন্তানদের লেখা পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। যেখানে সব হারিয়ে সংসারই অভাব আর অনটন, সেখানে সন্তানদের লেখা পড়া চালিয়ে যাবে কিভাবে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে স্কুল কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা এখন নেমে পড়েছে নানারকম গৃহস্থলি কাজে। কেউ বা দোকানের কর্মচারী, অফিসের পিওন বা ধনী মানুষের বাসায় যোগ দিয়েছেন কাজের ছেলে হিসেবে। সরেজমিনে নদী ভাংগা মানুষের কষ্ট আর জীবন যাত্রা দেখলে মনে হবে এ যেন এক হৃদয় বিদারক ঘটনা।
অনেকের মেয়ের বিয়ে ভেংগে গেছে আজ এই নদী ভাংবার কারণে। জীবনের গতি হারিয়ে আজ অনেকেই দিশেহারা। অনেকেরে আকাশচুম্বি স্বপ্ন ভেঙ্গে ছার খাড়।
যে মেয়েটি লেখাপড়া করে দেশের বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল, অব্যাহত নদী ভাংগনের কারণে সে হয়তোবা আজ গার্মেন্টস কর্মী অথবা অন্যাকরও ঘরের কাজের মেয়ে। এ বিষয়গুলো আমাদের সকলের ভাবতে হবে।
উপযুক্ত সময়ে নদী ভাংগন প্রতিরোধে প্রকল্পগ্রহণও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে নদী ভাংগন প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে। জনস্বার্থেই নদী ভাংগন ঠেকাতে।
লেখক:
এস. এম. জহিরুল ইসলাম
চেয়ারম্যান
রুর্যাল জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশ (আরজেএফ)
৩৯/১, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ঢাকা।
Leave a Reply